Monday, November 19, 2018

আখ খাবেন কেন?

এক গ্লাস আখের রস আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে। আখে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্কসহ এবং আরও সব উপকারি উপাদান। শক্ত আখ চিবিয়ে খেলে ভালো থাকে দাঁতও। জেনে নিন আখের উপকারিতা সম্পর্কে।


  • আখে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্লুকোজ যা নিমিষেই দূর করে ক্লান্তি।
  • অ্যাসিডিটি বা পেটের সমস্যায় ভুগলে আখ খেতে পারেন নিয়মিত। এতে থাকা পটাসিয়াম হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়ায়।  
  • আখ খেলে শরীরে ফ্লবোনয়েড নামক একটি বিশেষ উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই উপাদানটি ক্যানসার সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত আখ খেলে ত্বক থাকা সুন্দর ও টানটান। আখে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে ত্বক বলিরেখা পড়ে না।
  • আখের রস কিডনির সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
  • শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় আখের রস। ফলে হার্ট থাকে সুস্থ।
  • আখ চিবিয়ে খেলে দাঁত ভালো থাকে।

পনির খাবেন কেন?

দুধ ও দইয়ের বিকল্প হিসেবে পনির খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। ১০০ গ্রাম পনিরে রয়েছে ১৮.৩ গ্রাম প্রোটিন, ২০.৮ গ্রাম উপকারী ফ্যাট, ২.৬ গ্রাম মিনারেল, ১.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২৬৫ কেসিএল এনার্জি, ২০৮ এমজিএস ক্যালসিয়াম, ১৩৮ এমজি ফসফরাসের পাশাপাশি আরও অনেক উপকারী উপাদান।
  • এনার্জির ঘাটতি দূর করে পনির।
  • পনিরে রয়েছে ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব উপাদান হাড়ের রোগ থেকে দূরে রাখে।
  • প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে পনিরে, যা হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।
  • দুগ্ধজাত এই খাবারটি থেকে পাওয়া যায় ফলেট। শরীরের লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করতে ফলেট বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হয় নিয়মিত পনির খেলে।
  • পনিরে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং রাইবোফ্লেবিন মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে। রাইফ্লেবিনের পাশাপাশি পনিরে প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, থিয়ামিন, নিয়াসিন এবং ফলেট নামেও বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর। এছাড়া ক্ষতিকারক কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতেও এর জুড়ি নেই।
  • নিয়মিত পনির খেলে মেটে প্রোটিনের ঘাটতি।

Sunday, November 18, 2018

রসুনের গুণ

দিনে অন্তত ১০-১৫ গ্রাম রসুন খাওয়া ভালো।  সাধারণত তরি-তরকারিতে একটুখানি রসুন না দিলে যেন রান্নাই হয় না। স্বাদ বাড়ানোর জন্য এই রসুনের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু শুধুই কি স্বাদের জন্য খাবেন? অন্তত ১১টি অবিশ্বাস্য ভেষজ গুণের কথা জানলে নিয়মিতই আপনি রসুন খেতে চাইবেন। ডায়ালাইল সালফাইডের মতো চমৎকার ওষুধি উপাদানের এই খাবারে কী সেই ১১ গুণ?

১. উচ্চরক্তচাপ কমায় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের অন্যতম কারণ উচ্চরক্তচাপ। প্রচলিত ওষুধের মতোই রসুন রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বলা হয়ে থাকে, ৬০০ থেকে ১৫০০ মিলিগ্রাম রসুন ২৪ সপ্তাহেই উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত চার কোয়া রসুন খান।

২. চর্বি ঝরিয়ে দেয় যদি আপনার দেহে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বা চর্বি জমে থাকে, তাহলে রসুনের শরণাপন্ন হোন। এটি আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বের করে ফেলে।

৩. মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ ঘটায় রসুনের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ শরীরের অক্সিডেশন বা জারণ প্রক্রিয়াকে কমাতে সাহায্য করে এবং কোষকে স্বাস্থ্যকর রাখে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও উন্নত করে। রসুন মস্তিষ্কের রোগ আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রংশ ও ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রম প্রতিরোধ করে।

 ৪. আয়ু বাড়ায় স্বাস্থ্যকর গুণাবলী থাকায় রসুন মানুষকে বেশি বাঁচতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ বা ইমিউন সিস্টেমকে সচল রাখে। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের জন্য রসুন বেশ উপকারী। দিনে অন্তত ১০-১৫ গ্রাম রসুন খাওয়া ভালো। প্রতীকী ছবি

৫. কর্মক্ষমতা বাড়ায় রসুন ক্লান্তি দূর করে শরীরে কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যাদের হৃদরোগ রয়েছে, তাদের হার্টরেট কমাতে সাহায্য করে এবং দুর্বলতা কাটিয়ে তোলে।


৬. ধাতুর বিষক্রিয়া প্রতিহত করে রসুন শরীরকে ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। এসব ধাতু অঙ্গের ক্ষতি করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, রসুন গ্রহণকারীদের ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এটি একইসঙ্গে মাথা ব্যথা উপশমেও উপকারী।

 ৭. হাড় শক্তিশালী করে একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২ গ্রাম কাঁচা রসুন মেনোপজাল (মাসিক ঋতুচক্রের শেষ সীমায় থাকা) নারীদের ইস্ট্রোজেনের (জরায়ু, স্তন ও প্রজনন অঙ্গের গঠনের ভূমিকা রাখে এমন হরমোন) অভাব দূর করে। এটি হাড়ের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রসুন কাজে লাগে।

৮. ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে রসুন ছত্রাকের সংক্রমণে প্রতিষেধকরূপে কাজ করে। আক্রান্ত স্থানে রসুনের তেল অথবা জেল ব্যবহারে ফল পাওয়া যায়। মুখ ও ঠোঁটের ক্ষতেও রসুনের পেস্ট ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়।

৯. অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে রসুন দেহের জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে। অ্যালার্জিজনিত শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রদাহ কমাতেও রসুন কাজ করতে পারে। এছাড়াও ফুসকুড়ি, ছোট কামড় ও চুলকানির মতো সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন রসুনের মাধ্যমেই।

 ১০. হজমে সাহায্য করে রসুন পাকস্থলীর ঝিল্লিকে উত্তেজিত করে, যার ফলে দ্রুত হজম হতে পারে। রসুন লিভার থেকে টক্সিন (অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত বিষ) বের করে দিতে সাহায্য করে।

 ১১. গড় পুষ্টিগুণ রসুনে নানা পুষ্টিগুণের মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ ২৩ শতাংশ, ভিটামিন বি৬ ১৭ শতাংশ, ভিটামিন সি ১৫ শতাংশ, সেলেনিয়াম ৬ শতাংশ এবং ফাইবার ০.৬ গ্রাম। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় দিনে অন্তত ১০-১৫ গ্রাম রসুন খাওয়া ভালো। তবে ২০ গ্রামের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত রসুন গ্রহণের ফলে শরীরে বিষাক্ততা তৈরি হতে পারে।

জেনে নিন জিরার ৬টি অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকার : জিরার গুণ

নিত্য প্রয়োজনীয় মসলাগুলোর মধ্যে অন্যতম জিরা। রান্না করা খাবার সুস্বাদু করতে কিন্তু এর জুড়ি মেলা ভার। রান্না ছাড়াও জিরার আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
জেনে নিন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জিরার কিছু কাজ:
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বেশি করে জিরা খাওয়া দরকার। মসলাটি শুধু তাদের ডায়েটকে নিয়ন্ত্রণে রাখে না; একইসাথে রক্তে চিনির পরিমাণও কমিয়ে দেয়।
পৌষ্টিক স্বাস্থ্য
জিরা পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। বদহজম, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা প্রভৃতি রোগ উপশমে জিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জিরা বমি বমি ভাব দূর করে। এছাড়া জিরাতে থাইমোল রয়েছে; যা পাকস্থলিতে এসিড উৎপাদন করে খাদ্য থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টি লাভে সহায়তা করে।
দূষণরোধ
জিরা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিয়ে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। এতে শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে পারে। ফলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে শরীর পায় সুরক্ষা।
ত্বকের সুরক্ষা
লাল লাল ফুসকুড়ি, ব্রণ ইত্যাদি শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্য হয়। বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলো বের হয়ে গেলে ত্বকের উপর এর প্রভাব কমে আসে। জিরা পাচনতন্ত্রের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে ত্বকের সুরক্ষাও দিয়ে থাকে।
হাঁপানি
হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীরা জিরা বীজের সুবাস নিলে ভালো উপকার পেতে পারেন।
মাসিক নিয়মিত করে
যেসব নারীরা অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য জিরা ভালো কাজ দেয়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
রক্তস্বল্পতার সমাধান করে
জিরায় প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকায় তা হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে বাড়াতে সাহায্য করে। যারা রক্তস্বল্পতার সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য ভালো কাজ করে মসলাটি।
বয়স কমিয়ে দেয়
তারুণ্য ধরে রাখতে জিরা খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কাজেই বয়সের ছাপ রুখতে মসলাটি কম-বেশি সব তরকারিতে খাওয়া ভালো।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান
গ্যাস্ট্রিকে সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে জিরা।
রক্ত বিশুদ্ধকরণ
রক্তকে বিশুদ্ধ করতে জিরার বিকল্প নেই। প্রতিদিনের খাবারে জিরার গুঁড়া দিলে তা স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভালো।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
গবেষণায় দেখা গেছে, জিরাতে শক্তিশালী ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি পেট ও লিভার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রাখতে পারে। এছাড়া জিরাতে বিদ্যমান এন্টি-ফ্রির্যা ডিকেলস উপাদান ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করে।
এছাড়া কিডনি সমস্যাসহ খুশকি দূর করা, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যা, হজমশক্তি বাড়ানো ও বিপাকীয় কার্যকলাপে ভূমিকা রাখে জিরা। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় জিরা খাওয়ার বিকল্প নেই।
তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

Tuesday, November 13, 2018

গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

গ্রিন টি সহ অন্যান্য চায়ের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনই একটি হচ্ছে ভেষজ চা। তবে এ চা সম্পর্কে অনেকেরই হয়তো জানা নেই। অন্যান্য চায়ের মতো ভেষজ চাও শরীরের জন্য বেশ উপকারী। নিচে ভেষজ চাসহ বিভিন্ন রকমের চায়ের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো :
এলাচ চা : এলাচ চা হতে পারে আপনার দিন শুরু করার সবচেয়ে ভালো পানীয়। এটি শুধু হজমশক্তিই বাড়ায় না আরও কিছু গুণ রয়েছে এলাচ চায়ের। এটি মাথাব্যথা কমায়, পেটের সমস্যা দূর করে এবং দেহ ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এলাচের উপাদান দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে।
দারুচিনি চা : প্রধানত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত দারুচিনি নামের ভেষজটির উপকার সম্বন্ধে অনেকেরই জানা নেই। এটি অত্যন্ত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি উপাদান। দারুচিনি চা দেহের কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগও দূরে রাখা সম্ভব এ চা পান করে।
জাফরান চা : মূল্যবান এ মসলাটিতে রয়েছে বহু ধরনের গুণ। অনেকেই জাফরান বিভিন্ন খাবার প্রস্তুতে ব্যবহার করলেও চায়ে ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। তবে এক কাপ চায়ে যদি সামান্য জাফরান ব্যবহার করা হয় তাহলে তা শুধু স্বাদ কিংবা সৌন্দর্যই বাড়াবে না কিছু স্বাস্থ্যগত সুবিধাও পাওয়া যাবে। জাফরানের রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। এছাড়া এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
জিরা চা : জিরা ঘুমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি দেহ শীতল করতেও ভূমিকা রাখে। জিরা বিভিন্ন খাবার থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন গ্রহণে সহায়তা করে। তাই চায়ে জিরার গুড়া প্রয়োগে বহু উপকার পাওয়া সম্ভব।
ক্যামোমিল চা : এক কাপ ক্যামোমিল চা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। রাতের খাবারের পর এক কাপ ক্যামোমিল চা উদ্বেগ দূর করে ঘুম আনতে সহায়তা করে। ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতেও ক্যামোমিল কার্যকর।

ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা ও ব্যবহার

আজকের পোষ্টে আমরা কিছু ভেষজ খাবারের গুণাগুণ এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানাব। তবে তার আগে চলুন একটি দৃশ্যকল্প দেখে নেই- 
ঢাকা শহরে ছেলের বাসায় বেড়াতে এসেছেন এমাজউদ্দিন সাহেব। দুটো নাতিকে দেখেছেন তাও বহুদিন হয়ে গেল। ঢাকায় তাই না আসলেই নয়। ছেলের চাকরির ব্যস্থতার কারণে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় হয় না বললেই চলে। অগত্যা এমাজউদ্দিন সাহেবকে নিজেই চলে আসতে হল ঢাকায়! সাথে এসেছেন তাঁর স্ত্রী রাহেলা খাতুন।
ছেলের ঢাকা শহরে নিজের বাসা, দুই নাতি দেশের স্বনামধন্য এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করে, এমাজউদ্দিন সাহেবের সম্পদশালী ছেলে রাহাতের অবস্থানে সমাজের উপরতলাতেই – একথা বলা চলে। ছোটখাট অসুখ বিসুখ সারাতে রাহাত পরিবার নিয়ে পাড়ি জমায় বিদেশ, চিকিৎসা করায় বিদেশের দামী হাসপাতালে – ঢাকায় এসে এই জিনিসটা আবিষ্কার করতে পেরে বেশ বিরক্ত হলেন এমাজউদ্দিন সাহেব। ঢাকায় আসার দ্বিতীয় দিনের মাথায় সকাল থেকে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন ছোট নাতির প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লেগেছে, আগেরদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার সময় বৃষ্টিতে ভিজে এ দশা হয়েছে তার। বৌমার হুলস্থুল চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে রুমের বাইরে এসেই এমাজউদ্দিন সাহেব দেখেন এই অবস্থা! জোরে জোরে ফোনে কার সাথে জানি কথা বলছে বৌমা। কথা শেষ করে বৌমা দেখলো এমাজউদ্দিন সাহেব সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে।
– বাবা দেখেছেন কি যন্ত্রণায় পড়লাম? রাতুলের ঠাণ্ডা লেগে জ্বর এসে বিতিকিচ্ছিরি এক ব্যাপার হয়েছে! “XYZ হাসপাতাল” এর ডঃ আনসারির কাছ থেকে সিরিয়ালই পাওয়া যাচ্ছেনা আজকের মধ্যে! কি একটা যন্ত্রণা দেখুন তো! ছেলেটার স্কুলে যাওয়া লেখাপড়া সব বন্ধ হয়ে যাবে নাকি!
– মা, কি হয়েছে রাতুলের? ঠান্ডাজ্বর তাই তো? ডাক্তারের জন্য এত হুলস্থুল করছ কেন? দাওয়াই তো চাইলে হাতের কাছেই পাওয়া যায়!
– কি যে বলেন বাবা, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ খাওয়াটা কি ঠিক?
– তা হয়তো ঠিক না, কিন্তু এসব ঠাণ্ডা জ্বরের মত এরকম অনেক রোগবালাইয়ের চিকিৎসা কিন্তু আমরা চাইলে ঘরে বসেই করতে পারি! ডাক্তারের ওষুধের জন্য অপেক্ষা করতে হয়না! এই যে তোমরা কথায় কথায় যেকোন অসুখ হলে বিদেশ যাও, এত খরচের কি দরকার যদি আমরা স্বাস্থ্যকর কিছু খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আগে থেকেই রোগবালাইকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি?
– তা কি করে হয় বাবা?
– বলছি! কই রাহেলা কই গেলা? তুমিও আসো! আজ তোমাদের ভেষজ গুণাগুণসম্পন্ন এমন কিছু খাবারের নাম বলব যা খেলে শরীর এমনিতেই সুস্থ থাকবে! এভাবে বারবার বিভিন্ন অসুখে-বিসুখে ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য ছুটাছুটি করা লাগবেনা!

ভেষজ খাবার এর উপকারিতা ও ব্যবহার

যষ্টিমধু

অন্যতম প্রধান একটি ভেষজ খাবার। এটা মূলত গাছের শিকড়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, পৃথিবীতে যত ওষুধ তৈরি হয়, তার প্রায় প্রতিটিতে যষ্টিমধু দেওয়া হয়। ঠাণ্ডা লাগা, ঠান্ডাজ্বর, কাশি, গলাব্যথা, রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেও যষ্টিমধুর তুলনা নেই। যাঁরা এসিডিটিতে ভোগেন, তাঁরা ফুটানো পানিতে যষ্টিমধু ভিজিয়ে ঠাণ্ডা করে ওই পানির ভেতর মধু দিয়ে পান করুন, উপকার পাবেন। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দুধের সঙ্গে যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন, স্মৃতিশক্তি বাড়বে। ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে যষ্টিমধু ও ঘি একত্রে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এছাড়া ত্বকের বলিরেখা, ব্রণ ও দাগ দূর করে।

অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধা এমন একটি ভেষজ খাবার যা ক্লান্তি দূর করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। আমাদের শরীর যখন খুব ক্লান্ত হয়ে পরে, তখন রোগ প্রতিরোধ সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই সময় অশ্বগন্ধা এন্ডোক্রাইন হরমোনের নিঃসরণে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং আমাদের স্নায়ুকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এরফলে ক্লান্তি খুব সহজে দূর হয়। এছাড়াও অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরের ভিতর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অশ্বগন্ধা দুশ্চিন্তা, স্নায়ুরোগ সহ নানারকম রোগের প্রতিকার করার কাজে ব্যবহৃত হত। যেহেতু অশ্বগন্ধা ক্লান্তি দূর করে স্নায়ুকে আরাম প্রদান করতে পারে, তাই ঘুম আসে খুব তাড়াতাড়ি। এছাড়াও, খুব তাড়াতাড়ি চিন্তামুক্ত করে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে সাহায্য করে। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। ডায়াবেটিসের সমস্যা এখন খুবই সাধারণ ব্যাপার। যদিও এই সমস্যাকে কাবু করতে অশ্বগন্ধার জুড়ি মেলা ভার। প্রাচীনকালে অশ্বগন্ধার সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো।
২০০৯ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভেষজ অশ্বগন্ধার সঙ্গে শিলাজিত মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ জীবন দান করতে পারে। অশ্বগন্ধা বাতের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবে সারাতে পারে। বাতের সমস্যায় এমন বহু ওষুধ আছে, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এদিকে অশ্বগন্ধা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই বাতের সমস্যা সমাধান করতে পারে। এছাড়াও, হাঁটু এবং কনুই ফুলে যাওয়া ও ব্যাথা দূর করতে অশ্বগন্ধার জুড়ি মেলা ভার। অশ্বগন্ধা ত্বককে চিরনতুন এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা এস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যা কোলাজেন তৈরি করে ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও অশ্বগন্ধার শেকড় প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে খুব ভাল স্নায়ুর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতেও সাহায্য করে। আসলে অশ্বগন্ধার মধ্যে উপস্থিত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

চিরতা গুড়া

চিরতার গুড়া স্বাদে তেতো, কিন্ত দারুণ উপকারি একটি ভেষজ খাবার। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে চিরতা কার্যকর। ডায়রিয়া ও লিভারের বিভিন্ন রোগে প্রতিরোধে চিরতার পানি উপকারী। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ করুন। এর পর ওই পানি ছেঁকে সকালে অর্ধেক এবং বিকালে অর্ধেক করে পান করুন। অ্যালার্জিতে শরীর ফুলে উঠলে চিরতার পানি পান করলে উপকার পাবেন। রাতে ৫ গ্রাম চিরতা ২৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ওই পানি ২-৩ বার পান করুন। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমিভাব হলে ১ গ্রাম চিরতা গুড়ো করে চিনির পানি মিশিয়ে পান করলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
জ্বরের কারণে বারবার বমি হতে থাকলে সে খেত্রে ২ কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখুন। দু-তিন ঘণ্টা পর ছেঁকে পানি অল্প অল্প করে পান করুন। হাঁপানির প্রকোপ বেশি হলে আধা গ্রাম চিরতা গুড়া ৩ ঘণ্টা পর পর মধু মিশিয়ে ২ থেকে ৩ বার অল্প অল্প করে চেটে খান। হাঁপানির প্রকোপ কমবে। কৃমির উপদ্রব হলে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত চিরতা অল্প মধু বা একটু চিনি মিশিয়ে খান, সমস্যা মিটবে। এ ছাড়া কৃমির কারণে যদি পেটব্যথা হয়, তাও সেরে যাবে। চুল পড়ে যাওয়াও রোধ করা যায় চিরতার মাধ্যমে। খুশকি থাকলে তাও সেরে যাবে চিরতার গুণে।

মেথি গুড়া

মেথি সবাই চেনেন। মেথিকে মসলা, পথ্য, খাবার – তিনটিই বলা যায়। মেথি গুড়ার স্বাদ খানিকটা তিতা। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। মেথিতে রয়েছে তারূণ্য ধরে রাখার আশ্চর্য এক ক্ষমতা। যারা নিয়মিত মেথি খান, তাদের বুড়িয়ে যাওয়ার গতি অত্যন্ত ধীর হয়। লেবু ও মধুর সাথে এক চা-চামচ মেথি মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি পালাবে। এছাড়া মেথিতে বিদ্যমান মিউকিল্যাগ গলাব্যথা সারাতে সাহায্য করে। রক্তে চিনি কমানোর বিস্ময়কর উপাদান হিসেবে মেথি বিবেচিত হয়। সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে অথবা মেথি ভেজানো পানি খেলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে কৃমি ও নানান রোগ দূর হয়। খাবারে মেথির স্বাস্থ্যসম্মত উপস্থিতি ডায়াবেটিক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। মেথি গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের মহৌষধ হিসেবে পরিচিত। মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালিজিরার মতো মেথি পিষে খেলে উপকার হয়। তবে মেথি ভাজলে এর গুণাগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কড়া রোদে মেথি শুকিয়ে তার ভর্তা খাওয়া যেতে পারে। মাসিকের ব্যথায় কাঁচা মেথি চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। রূপচর্চাতেও মেথির ব্যবহার রয়েছে ব্যাপক। যেমন – মেথি নারকেল তেলের বোতলে রেখে দিন। মেথি ভেজা এই তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের গোড়া হয় শক্ত ও মজবুত। মেথি গুঁড়ো টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল হয় কোমল ও ঝরঝরে। মেথি ভিজিয়ে তা বেটে মেহেদি ও ডিমের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া রোধ হবে। মেথি গরমজনিত ত্বকের অসুখে অত্যন্ত উপকারী। ত্বকে ঘা, ফোড়া, ইরিটেশন ইত্যাদি দূরীকরণে মেথির জুড়ি নেই। মেছতায় মেথি বাটা নিয়মিত ব্যবহার করলে তা সহজে ছড়িয়ে পড়ে না এবং ধীরে ধীরে কমে যায়। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।

ত্রিফলা গুড়া

ত্রিফলাকে বলা হয় “মাদার অফ অল হার্বস”। আমলকী, হরিতকি ও বহেরার সমানুপাতিক মিশ্রণে তৈরি ত্রিফলা গুড়া। এতে কোন চিনি যোগ না করায় এর স্বাদ হালকা ঝাঁজালো হবে। হাই কোলেস্টেরল লেভেল আর আরথাইটিসের ঝুঁকি কমায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে ও বদহজম জনিত সমস্যা দূর করে। শরীরে ফ্যাট সেল জমতে না দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।  অন্ত্রের সব বর্জ্য দূর করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়ায়।
—–
বুঝতেই পারছেন যে খাদ্যদ্রব্য শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবারনের জন্যেই ব্যবহার হয়না। কিছু ভেষজ ধাদ্যদ্রব্য ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই ভেষজ গুণসম্পন্ন খাদ্য গুলো সম্পর্কে জানা এবং বিভিন্ন রোগ বালাই এড়াতে নিয়মিত খাওয়া।কিন্তু কোথায় পাবেন এসব খাবার? চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে দারুন সমাধান। অনলাইনে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যদ্রব্য অর্ডার করার জন্য ভিজিট করুন

আখ খাবেন কেন?

এক গ্লাস আখের রস আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে। আখে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যা...